পান্তা ভাতের ভালোমন্দ : Good And Bad Of Panta Bhat(Fermented Rice)
পান্তা ভাতের ভালোমন্দ অর্থাৎ পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক ছাড়াও পান্তা ভাতের উপাদান, পান্তা ইলিশ কিংবা পান্তা ভাত আলুসেদ্ধ, পান্তা ভাতের রেসিপি অর্থাৎ রন্ধন প্রক্রিয়া, পান্তা ভাতের বিকল্প নাম যেমন ইংরেজি নাম, হিন্দি নাম ইত্যাদি এই পোস্ট এর আলোচ্য বিষয়। পান্তা ভাতের ছবি সহ এডুবাঙ্গালীর "পান্তা ভাতের ভালোমন্দ" - পান্তা ভাতের ভালো ও মন্দ দিক ,পান্তা ভাতের উপাদান ও উপকারিতা আলোচিত এই স্পেশাল পোস্টটি আপনাকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করবে।
ভালোমন্দ বোঝার আগে পান্তা ভাত কাকে বলে জেনে নিন। ভাতকে জলে বা পানিতে ভেজানো হয় বলে এর নাম পান্তা ভাত কিন্তু জলে ভেজালেই হবেনা কম পক্ষে ১২ ঘন্টা ভেজানো থাকতে হবে । সাধারণত পান্তা
ভাতে লবণ, মিশিয়ে কাচা মরিচ ও পেঁয়াজ কামড় দিয়ে খাওয়া হয়। সাথে আলু
ভর্তা, বেগুন ভর্তা,ডাল ভর্তা ইত্যাদি হলে অতি উত্তম।যেখানে ইলিশ মাছ
সহজলভ্য সেখানে ইলিশ যোগে পান্তা ভাত রাজকীয় খাবারের মর্যাদা পায়।
সাধারণত আগের দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় বাড়তি পান্তা তৈরীর উদ্দেশে ভাত রান্না করে তাকে ঠান্ডা করে তারপর তাতে জল মেশানো হয়। আগের দিনের রান্না বলে খাবারটি আর টাটকা থাকেনা তাই পান্তা ভাত কে 'বাসি ভাত' বলা হয়।পান্তা ভাত পরের দিন সকালের নাশতা হিসাবে খাওয়া হয় ।
পান্তা ভাত মূলত বাঙালীর খাদ্য হলেও অন্যরা খায় না এটা ভাববেন না। দুই বাংলা যথা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের অবাঙালী রাজ্য যেমন ওডিশা, আসাম,বিহার ,ঝাড়খন্ড ও প্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে পান্তা ভক্ত দেড় দেখতে পাবেন। এছাড়া নেপাল ,থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াতেও পান্তাভাত খাবার প্রচলন আছে।
গ্রাম বাঙালার বেশীর ভাগ মানুষের প্রাতরাশে পান্তা ভাত একটি কমন খাবার। এমনিতেই বাঙালি ভাত প্রিয়, তাই 'ভেতো বাঙালী' বলা হয়। ভাত খাবার অভ্যাসের পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ও কাজ করে। ভাত অপেক্ষা সস্তায় পেট ভর্তি করার জন্য আর কিছু নেই বললেই চলে। তাই বাসি ভাত বা পান্তা ভাত বাঙালীর একটি জনপ্রিয় খাবার। বিশেষত গরীব কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর কাছে সকাল থেকে দুপুর অবধি সস্তায় শক্তি যোগানের একমাত্র অবলম্বন।
শহুরে পান্তা
রাত্রে খাবার জন্য রান্না করা ভাত উদবৃত্ত হয়ে গেলে অপচয় না করে সংরক্ষণের জন্য তাতে জল ঢেলে ভিজিয়ে রাখা হয়।পরদিন সকালে এই জলে ভেজানো পান্তা ভাতপ্রাতরাশ সেরে নেওয়া হয়। কিছু শহরে বিশেষ করে বাংলাদেশের শহরগুলিতে বাংলা নববর্ষকে পান্তা যোগে উদযাপন করে। পান্তা ভাতকে এই দিন বাঙালিয়ানার
প্রতীক মনে করা হয় এবং পদ্মার ইলিশ সজলোভ্য হওয়ায় ভাজা ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত খাওয়া হয়। বর্তমানে, বৈশাখের প্রথম সকালে ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত বাংলাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এটিকে পান্তা উৎসব ও বলা হয় , প্রত্যেক বছর ১লা বৈশাখে নতুন বছরকে বরণ করেহয় পান্তা
উৎসবের মাধ্যমে।
পান্তা ভাতের অন্যান্য আঞ্চলিক নাম সমূহ
পান্তা ভাতকে ইংরাজীতে বলা হয় ফার্মেন্টেড রাইস ( Fermented rice)
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য
পশ্চিমবঙ্গ -পান্তা ভাত,বাসি ভাতও ভিজে ভাত বলা হয়।
হিন্দিভাসী রাজ্যগুলিতে - হিন্দিতে পান্তা ভাত কে 'পানিওয়ালা চাওয়াল', পাখাল, বলা হয়।
অসমিয়া -পান্তা ভাত কে পঁইতা ভাত বলা হয়।
তামিল- পান্তা ভাত কে পজিয়াম কঞ্জি
(Pazhamkanji) ও ভেল্লাচোরু
(vella choru) নাম অভিহিত করা হয়।
মালায়ালম-পান্তা ভাত কে পজায়া সাদম
( pazhaya sadam) বলা হয় .
পান্তা ভাত প্রস্তুত করার প্রণালী
ভাতকে সারা জলে প্রায় ডুবিয়ে রাখযে তা পান্তায় পরিণত হয়। এর প্রস্তুত প্রণালী বলতে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই। এমনিতে শুকনো ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচন ধরে ফলে খাবার উপযোগী থাকে না। সেইজন্য জল ঢেলে পচনের হাত থেকে রক্ষা করা হয়। সেদিক থেকে দেখলে এটিকে ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি বলা যেতে পারে।
সাধারণত ১২-১৪ ঘণ্টা পরে পান্তা ভাত তৈরী হয়।বিকেলে বা সন্ধ্যায় ভাত রান্না করা এবং ওই ভাত রাত্রে খাওয়ার পর উদবৃত্ত ভাতে জল ঢেলে ঢাকা দিয়ে রাখা হয় এবং ।ইদানিং কালে ফ্রীজে সংরক্ষণ করার প্রচলন হলেও আগেকার দিনে ঘরের তাপমাত্রায় ভাত ঠান্ডা করে জলে ডুবিয়ে পিতল মা মাটির মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা হতো ।গ্রামাঞ্চলে অনেক বাড়িতে এখনো পুরোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কেউ কেউ অতিরিক্ত জল ফেলে দিয়ে দই এবং অল্প লবণ মিশিয়ে কাঁচা লঙ্কা ও পিয়াঁজ সহযোগে খান।
আমরা জানি ভাত প্রায় সবটাই কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। ভাতে জল দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া (উপকারী) শর্করা ভেঙ্গে তা থেকে ইথানল ও ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে। গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া ল্যাকটিক এসিড তৈরি করার ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় ও pH কমে । ফলে অনান্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ও ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।
পাতা ভাতের উপাদান ও উপকারিতা।
গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়ার তৈরী ল্যাকটিক অ্যাসিড ভাতের অ্যান্টি-নিউট্রিশনাল উপাদানগুলি ভেঙে দেয় ফলে লোহা, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো অণু-পুষ্টি এবং খনিজগুলির হাজার গুনের বেশি বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, 100 গ্রাম ভাতে আয়রন আছে ৩.৪ মিলিগ্রাম ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে পান্তা তৈরি করলে আয়রন এর পরিমান বেড়ে হয় ৭৩.৯১ mg যা ২০০০ শতাংশেরও বেশি।
খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদগণ বিশ্বের বিভিন্ন সমীক্ষা রিপোর্ট গুলো জানা যায় যে দক্ষিণ এশিয়ার স্বাস্থ্য অন্যদের তুলনায় ভাল। এটিতে বিরল B6, B12 ভিটামিন রয়েছে যা অন্য খাদ্য পরিপূরকগুলিতে সহজে পাওয়া যায় না। পান্তা ভাত কয়েক মিলিয়ন উপকারী ব্যাকটিরিয়া সৃষ্টি ফলে হজমে সহায়তা করে।
তাছাড়া এর মধ্যে অনেক রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশকারী এজেন্ট রয়েছে। পান্তা ভাতের কারণে অন্ত্রের মধ্যে যে ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি পায় তা অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির সুরক্ষা দেয় এবং তাদের কার্য ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করে । পান্তা ভাত হজমে সহায়তা ছাড়াও হাড় সমস্যা ও এবং পেশী ব্যথা বন্ধ করতে সাহায্য করে । গরম আবহাওয়ায় পান্তা ভাত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে। উচ্চমাত্রায় পুষ্টির জন্য পান্তাভাত খাওয়ার পরমুহূর্তেই শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি আসবে।
পান্তা ভাতে আমেরিকা
আমেরিকান নিউট্রিশন অ্যাসোসিয়েশন পান্তা ভাতের যে সুবিধাগুলো তালিকাভুক্ত করেছে সেগুলো হলো -
- প্রাতঃরাশ হিসাবে এই ভাত খাওয়া শরীর হালকা রাখে এবং শক্তিশালীও করে।
- উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি দেহের জন্য প্রচুর পরিমাণে উত্পাদিত হয়।
- সকালে যখন এটি খাওয়া হয় তখন পেটের অসুস্থতাগুলি অদৃশ্য হয়ে যায় কারণ শরীরে অতিরিক্ত এবং ক্ষতিকারক তাপ বজায় থাকে তাই নিরপেক্ষ হয়।
- যেহেতু এই খাবারটি খুব তন্তুযুক্ত, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শরীরের নিস্তেজতাও দূর করে।
- রক্তচাপ স্বাভাবিক হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রশংসনীয়ভাবে হ্রাস পায়।
- শরীর এই খাবারের কারণে কম ক্লান্ত বোধ করে যার ফলস্বরূপ একজন সারা দিন সতেজ অনুভব করে।
- এটি অ্যালার্জিজনিত সমস্যা এবং ত্বক-সম্পর্কিত অসুস্থতাগুলি সরিয়ে দেয়।
- এটি দেহের সব ধরণের আলসার দূর করে।
- এই চাল খাওয়ার কারণে তাজা সংক্রমণ উপসাগরীয় স্থানে রাখা হয়।
- এটি তারুণ্য এবং উজ্জ্বল চেহারা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- এটি গ্রহণ আপনার শরীরের চা বা কফির জন্য ক্ষুধা কেড়ে নেয়। এটি ভেগানদের ভিটামিন বি 12 এর সবচেয়ে ধনী উত্স। সুতরাং, আপনি যে অতিরিক্ত চাল রান্না করেছেন তা ফেলে দিন না। এটি আপনার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ হতে পারে।
সূত্র: http://nationalhealthtips.blogspot.in/2014/11/healthy-foods-how-oightight-cooked-rice.html
পান্তা ভাতের অসুবিধা বা ক্ষতিকারক দিক
যদিও পান্তা ভাতের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি তবে কিছু কিছ ক্ষেত্রে ষষ্ঠ বিশেষজ্ঞরা পান্তা ভাত এভোইড করতে বলরছেন বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটি ক্ষতিকর। এছাড়া বয়স্কদের জন্যও পান্তা ভালো নয়। শারীরিক যে কোন অসুবিধা বা অসুস্থতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থ অবস্থায় পান্তা ভ্যাট খেলে অনেক লাভ থাকলেও অসুস্থ মানুষের জন্য সমস্যা হতে পারে।
|
পান্তা ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি। ছবির উৎস -রেক্সনার মোবাইল ক্যামেরা.
|
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
comment here