সীমাহীন জীবন, হাত- পা হীন মানুষ নিক ভুজিচিক এর এক অনন্যসুলভ সৃষ্টি।
হাত পা হীন মানুষ নিক ভুজিচিক এর অসাধারণ লেখা সীমাহীন জীবন (লাইফ উইদাউট লিমিটস)একটি কৌতুকমিশ্রিত অনুপ্রেরণামূলক বই । নিক তার নিজের জীবনের অবিজ্ঞতগুলোকে রসিকতা ও অনুপ্ৰেরনার সমন্নয়ে অতীব সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন। অঙ্গহীন হয়ে জন্মানোর পর বেঁচে থাকার জন্য যার সবথেকে বেশি অনুপ্রেরণার প্রয়োজন ছিল অথচ প্রেরণা যোগাবার কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, আজ তিনই বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি আন্তর্জাতিক মোটিভেশনাল স্পিকার। এক অসাধারণ মানুষ, নিক ভুজিচিকের অতুলনীয় রচনা "সীমাহীন জীবন, " "লাইফ উইদাউট লিমিটস"
নিক ভুজিচিক (নিক) বা নিকোলাস জেমস ভুজিচিক জন্মগ্রহণ করেছিলেন টেট্রা-অ্যামেলিয়া সিনড্রোম, একটি বিরল ব্যাধি নিয়ে ,যার নাম ফোকোমেলিয়া। ফলস্বরূপ তার দুটি পা ও দুটি হাত কোনোটিই ছিলনা ,তাই তাকে হাত-পা হীন মানুষ বলা হয়। আসলে, ভুজিচিক এর দুটি ছোট কিন্তু বিকৃত পা রয়েছে - পা বলার পরিবর্তে আমরা পায়ের আঙ্গুল বলতে পারি, যার একটির আকার এবং গঠনের কারণে তিনি "চিকেন ড্রামস্টিক" বলেন । পায়ের আঙ্গুলগুলি আলাদা করার জন্য একটি অপারেশন করা হয়েছিল যাতে সেগুলি আঙ্গুল হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। তিনি ইলেক্ট্রনিক হুইলচেয়ার, কলম, বই, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং আরও অনেক কিছু চালাতে তার পা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন।
তার আত্মজীবনী অনুসারে, নার্স তাকে সামনে রাখলে তাঁর মা তাকে দেখতে বা ধরে রাখতে অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু অবশেষে তিনি এবং তাঁর স্বামী বাস্তবকে মেনে নিয়েছিলেন এবং এটি "তাদের ছেলের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা" হিসাবে বুঝতে পেরেছিলেন। অন্যদিকে, নিক তার কিশোর বয়সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন কারণ তার অসহায়ত্ব ও বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি থাকার কারণে । তবে অবশেষে নিক জীবনের চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে অবিচল ছিলেন এবং জীবনের মূল নীতিগুলি আবিষ্কার করেছিল যা তাকে তার জীবনের উদ্দেশ্য সন্ধান করতে এবং বাধাগুলিকে সুযোগে পরিণত করতে সক্ষম করে।
শিক্ষা ও কার্যক্রম
২১ বছর বয়সে, নিক গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক- (হিসাবরক্ষক এবং আর্থিক পরিকল্পনা) হন।
নিক ২০০৫ সালে 'লাইফ উইদাউট লিম্বস' - একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা এবং মন্ত্রক প্রতিষ্ঠা করেছেন।
২০০৭ সালে, তিনি " অ্যাটিটিউড ইজ অ্যালটিটিউড" নামে একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রেরণামূলক বক্তৃতা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
নিক " দ্য বাটারফ্লাই সার্কাস" শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন। ২০১০ এর মেথড ফেস্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'উইল' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান ।
'অ্যাটটিউড অলটিটিউড' আগস্ট ২০১১-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
ভুজিচিকের একটি সংগীত ভিডিও, "সামথিং মোর " হিসাবে পরিচিত।
তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইট অনুসারে নিক বিবিসি, 60 মিনিট অস্ট্রেলিয়া, সিবিএস রবিবার সকাল, ওপ্রেসের লাইফক্লাস, ইউএসএ টুডে, পিপল ম্যাগাজিন, এবিসি নিউজ, দ্য গ্লেন বেক প্রোগ্রাম টিএলসি, এলএ স্টোরিজ এবং আরও অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত আছেন ।
তাঁর ১২ মিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার রয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাদের "দ্য নি ভুজিচিক পডকাস্ট" এর মাধ্যমে এবং ওয়েবিনার ও কোচিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত করেন।..
ধর্মীয় বিশ্বাস
নিজের ওয়েবসাইটে স্ব-রচিত "স্টেটমেন্ট অফ বিলিফ " -তে, নিক খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি তাঁর অনুগততার কথা বলেছিলেন। তাঁর বিশ্বাসের ধারায় যিশুখ্রিষ্টের আসন্ন দ্বিতীয় আগমনও অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি প্রকাশ্যে কোনও সম্প্রদায়কে মেনে চলেন না। তিনি বলেন সবকিছু ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণে।তাকে খুশি রাখা আমাদের কর্তব্য।
ব্যক্তিগত জীবন
৯ই মার্চ, ২০০২, ভুজিক ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন।
পরে তিনি টেক্সাসের ম্যাককিনিতে
কানিয়ে মিয়াহারার সাথে দেখা করেছিলেন।
১২ই ফেব্রুয়ারী, ২০১২ তে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতে বসবাস শুরু করেন । এই দম্পতির চার সন্তান রয়েছে।
নিকের লেখা বইসমূহ
সীমাহীন জীবন: একটি হাস্যকর সুন্দর জীবনের অনুপ্রেরণা (২০১০)
সীমা ছাড়া আপনার জীবন (২০১২)
সীমাহীন: একটি হাস্যকর সুখের জীবন (২০১৩)
অবিরাম: অবিশ্বাস্য শক্তির বিশ্বাসের অ্যাকশন (২০১৪)
অবিরাম বিশ্বাসের শক্তি (২০১৪)
স্ট্যান্ড স্ট্রং (২০১৫)
সীমা ছাড়া প্রেম (২০১৬)
তাঁর সমস্ত সন্তানের জন্য হাত ও পা হোন, ঈশ্বরের ভালবাসা জাগ্রত করুন (২০১৮)
সুন্দরী স্ত্রী কানিয়ের স্বামী এবং চার সন্তানের জনক নিকের আবেগ হ'ল বিশ্বকে অনুপ্রেরণা ও শক্তিতে সুসজ্জিত করা যাতে করে আমরা সকলেই প্রতিকূলতার উর্দ্ধে হৃদয় ও মনের প্রতিটি অক্ষমতা কাটিয়ে উঠতে পারি!
নিক তার বেঁচে থাকার অক্ষমতাকে মাথা উঁচু করে বাঁচার শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন । তিনি একজন বিখ্যাত অনুপ্রেরণাকারী বক্তা, অভিনেতা এবং লেখক। তিনি একজন ধনবান,মাল্টি মিলেনিয়ার। অর্থ, ,নাম, সুখ শান্তিতে পরিপূর্ণ এক আদর্শ জীবনযাপন বলতে যা বোঝায় তার ঠিকানা নিক । তিনি সত্যিকারের সুখের অনুসন্ধানকারীদের জন্য তিনি একজন মডেল ।
অনুপ্রেরণামূলক উদ্ধৃতি
👉"প্রভাব হ'ল উপহার, যা কখনও কখনও প্রদত্ত বা অর্জিত হয়, ভাল বা খারাপের জন্য পরিচালিত এবং অনুপ্রেরণা জোগায়।একটি নেতিবাচক প্রভাব থেকে ইতিবাচক প্রভাবের দিকে পরিবর্তিত হতে খুব বেশি লাগে না তবে অনেকে অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বে তাদের প্রভাবের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করে। আমি কেবল কল্পনা করতে পারি বিশ্বটা কেমন হবে যদি আমরা আমাদের সকলের কিছুটা স্তরের নেতা হওয়ার শক্তি এবং তার ইতিবাচক প্রভাব ফেলার আকাঙ্খাকে বুঝতে পারি"।
👉"আমি জানতাম যে আমি আমার জীবনের সাথে কী করতে চাই যখন আমি কয়েক মিনিটের জন্য ৩০০ শিক্ষার্থীর সামনে কথা বলি এবং একটি মেয়ে কাঁদতে আসে আমাকে ধন্যবাদ দিতে এবং সেটা আমাকে বলার জন্যে যে আমি তাকে ভালবাসি সে ঠিক সেভাবেই সুন্দর"
👉 "আমার বাবা-মা আমার শৈশবকালে আমার জন্য শক্তির স্তম্ভ ছিলেন এবং পথে বহু লোক এবং অভিজ্ঞতা আমাকে আজকের আমি হতে উৎসাহিত করেছিলেন"।
👉"আমার কথা বলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিরতি ঘটে যখনই আমি কথা বলি। যখন কেও আসে এবং শেয়ার করে যে তাদের কতটা স্পর্শিত হয়েছে এবং পরিবর্তিত হয়েছে, এটিই সর্বাধিক প্রতিদান বা ব্রেক।"
👉"আশা করি খাঁটি লোক হিসাবে যে ভান করে না যে সবসময় সবকিছু ঠিক আছে এবং জীবনের সমস্ত বেদনা বোঝে ...কিন্তু কে সত্যিকার অর্থে অনুপ্রেরণা জাগাতে চায় তাদেরকে সব পরিস্থিতিতে যারা কখনও হাল ছাড়ে না? "
👉"আপনাকে যে অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলি কাটিয়ে উঠতে হয়েছিল তা ফিরে দেখুন, আপনার যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন এবং এমন শক্তি অর্জন করুন যা আপনাকে একদিনে একদিন ধরে রাখবে"।
👉"আমি বিশ্বাস করি এটি সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বিশ্ব বলবে যে কঠোর পরিশ্রম এবং ভাগ্য ছিল, তবে আমি বলব যে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি তবে আমি জন্মগ্রহণ করে ধন্য হয়েছি আমি যেখানে ছিলাম, যখন ছিলাম, যার সাথে আমি জন্মগ্রহণ করেছি ইত্যাদি আপনার যা আছে তা নিয়ে বিশ্বস্ত থাকুন এবং প্রভু আপনাকে আশীর্বাদ করবেন।"
👉"আমরা পড়ে যাব, ব্যর্থ হব এবং অনুভব করব যে আমরা কখনও কখনও চলতে পারি না ... জেনো আমরা সাহায্য ছাড়া এই জীবনে কিছু করতে পারি না"।
👉"এটি বাইরের সম্পর্কে নয়, আপনার কাছে কী আছে বা কী নেই, বা অর্থ আছে বা বাড়ির কত বড়।এটা জেনো যদি তুমি তোমার স্ত্রীর হৃদয় ধরে না রাখতে পারো তবে তার হাত ধরে কোনও লাভ নেই। এটি একটি গৃহ সরবরাহ সম্পর্কিত , তোমার বাচ্চাদের জন্য ঘর নয় এবং সেরা বাবা ও স্বামী হতে পারার বিষয় নয় । অতীত থেকে শেখা এবং এগিয়ে যাওয়া "।
উপসংহার
হাত - পা হীন হলেও নিক ফুটবল, ক্রিকেট ও বেস বল খেলতে পারেন। নিক মাছ ধরতে পারেন, সাঁতার কাটতে পারেন , বোটিং করতে পারেন। নিক আরো অনেক কিছু করতে পারেন যা আমরা হাত পা থেকেও করতে পারিনা অথবা পারি কিনা জানিনা। তার এতো কিছ রহস্য কি ? আমার বিশ্বাস তার হাত পা না থাকাটাই অনেক কিছু থাকার কারণ। নিক বলেন "আমি যখন উঁচুতে উঠতে চেষ্টা করি ,আমি পড়ে যাই -আবার উঠি আবার চেষ্টা করি আবার পড়ে যাই "-এইভাবে চলে একবার দুবার। ...বহুবার , 'পারো কি না পারো দেখো শতবার' এর মতো ব্যাপার। এই যে বার বার পড়ে যাওয়ার মধ্যে নিক এক ধরণের মজা বা আনন্দ উপভোগ করেন। বাধা কে সুযোগ এ রূপান্তরিত করার কৌশল বা ব্যর্থতার বেদনাকে সাফল্যের আগাম আনন্দে পরিবর্তিত করার মনোবৃত্তিতাটাই নিক কে কিংবদন্তী বানিয়েছে। নিক কে নিয়ে লিখতে বসে ভাবছি আমি কত অধম হাত পা হীন না হলেও কখনো কখনো অতীতে পড়ে গেছি বটে তাতে আনন্দ বা মজার লেশ মাত্র ছিল না ,ছিল বেদনার দংশন। পড়ে যাওয়া ও বেদনার ঘটনাটিকে জীবনে বড় কিছু পাওয়া বা হারানোর মতো মহা মূল্যবান ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করেছি ,বয়ে বেড়িয়েছি ,বর্ণনা করেছি আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব বিভিন্ন মহল ও সাবমহলে। আজও বয়ে বেড়াই। এখন ডিজিটাল যুগ, ঘটনা বড় কিংবা ছোট হোক তাকে ঝাচকচকে পোস্টার ,স্টিকার ইমোজি জড়িযে রঙ্গীলা রূপবতী করে না পোস্ট করলে সহানুভূতি দূরের কথা বা হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে লাইক বোতামে একটা গুঁতোও দেবেনা।...... এইসব করতে করতে যখন হুশ হলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে , ঘরের কোনায় এক টুকরো কাগজ দেখে কুড়িয়ে নিলাম।
যে সাফল্য কে ধরার জন্য কত পথ হন্নে হয়ে ঘুরেছি ,ধরা যায় কিনা তা নিয়ে বিশ্বাস আর অবিশ্বাস এর মধ্যস্থলে অবস্থান করেছি , সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর রাগে, অভিমানে আমাকে ছেড়ে অনেক দূর চলে গেছে। লিখেছে "আমি অন্য কারো হবার জো নেই,জন্মগত ভাবে আমি তোর ,আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তোর জন্য। আমাকে পাবার একটাই উপায় -তুই ওসব ছাড় ,নিজেকে বদলে ফেল।
সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টরাজ্যে তুই এমন কিছু সৃষ্টি কর যাতে সমগ্র সৃষ্টিকুলের নজর তোর দিকে ধাবিত হয়।"
ইতি - সাফল্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
comment here